Breaking

Saturday, October 6, 2018

অলসদের জন্য বিসিএস টিপসঃ এক নজরে দেখে নিন



বিসিএস টিপস, অলসদের জন্য - আপনি যদি অলস, আকাইম্যা, ঘুমকাতুরে, ব্যর্থ, সাপ্লিখাওয়া ও ব্যাকবেঞ্চার হয়ে থাকেন তাহলে এই পরামর্শ গুলো আপনার বিসিএস পরীক্ষার জন্য কাজে লাগবে।
ডা: কামরুল হাসান রাহাত, ৩৫ তম বিসিএস

পর্ব ১: লাইফস্টাইল
আপনি যদি সিরিয়াস, কর্মঠ ও ভালো ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে এই লেখা আপনার জন্য নয়। কিন্তু আপনি যদি আমার মতো অলস, আকাইম্যা, ঘুমকাতুরে, ব্যর্থ, সাপ্লিখাওয়া ও ব্যাকবেঞ্চার হয়ে থাকেন তাহলে এই পরামর্শ গুলো আপনার বিসিএস পরীক্ষার জন্য কাজে লাগবে।
১. প্রথমেই কোচিং করার পরিকল্পনা বাদ দেন। আপনি যেহেতু অলস তাই জ্যাম ঠেলে কোচিং যাওয়া আসা, ক্লাস করা এসব আপনার পোষাবে না। তার চেয়ে বরং যে সময়টা রাস্তায় কাটাতেন সেই সময়টা ঘুমিয়ে কাটান। আর ক্লাসের সময়টা বাসায় বসে একটু পড়েন।
২. কোন স্ট্রিক্ট রুটিন করার দরকার নাই। কারন অলস মানুষ হিসেবে আপনি দেরিতে ঘুম থেকে উঠেন। নাস্তা খান দুপুরে, ভাত খান বিকালে। আপনার কোন কিছুরই ঠিক ঠিকানা নাই। তাই স্পেসিফিক রুটিন করলে ফলো করতে পারবেন না। ব্যর্থ হবেন। তাতে মন খারাপ হবে। হতাশা আসবে।

৩. পড়ায় সিরিয়াস হতে যেয়ে বিনোদন মূলক কাজকর্ম থেকে দূরে থাকবেন না। তাহলে মানসিক চাপ বাড়বে। বাংলাদেশের খেলা মিস দেওয়া যাবে না। বিকালে আপনার মতো আকাইম্যা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবেন। একটু ঘুরাঘুরি করবেন। ‘হাওয়া বদল’, ‘আশ্চর্য প্রদীপ’, ‘ভুতের ভবিষ্যত’ বা ‘আয়নাবাজি’ মতো বিনোদনমূলক চলচ্চিত্রগুলো দেখবেন। তবে হিন্দি সিরিয়াল দেখবেন না। মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।
৪. পরীক্ষায় পাস করতে হবে এই চিন্তা বাদ দেন। আপনি সাপ্লিখাওয়া স্টুডেন্ট। ব্যর্থতা আপনার নিত্য সংগী। তাই পাস করতেই হবে এই চিন্তা করে মনের উপর চাপ বাড়ানোর দরকার নাই। ফুরফুরে থাকেন, নিজের মতো পড়েন। তারপর পাস করে গেলে লোকজন বলবে “পোলাডা যে জিনিয়াস এইডা কিন্তু আমি আগেই জানতাম”।
৫. আপনার বাসার লোকজন যেমন আব্বা, আম্মা, ভাইবোন সবাই আপনাকে বলবে “ওমুক বাড়ির আক্কাস মিয়ার পোলা মুকলেস জীবনে কত কিছু কইরা ফেলাইলো, তুই ঘুমাইয়া ঘুমাইয়া জীবনটা শেষ কইরা দিলি”। এসব কথা শুনার সাথে সাথে বইটা বন্ধ করে মনে মনে ভাববেন আপনি মুকলেস না। আপনি হচ্ছেন আপনি। আপনি বেশি ঘুমান মানে আপনি বেশি এনার্জেটিক। তাই সফলতার পিছনে না দৌইড়া নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন। আর পরীক্ষার আগের ছয় মাস থেকে আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকেন।
আজ এই পর্যন্তই। পড়াশোনা কিভাবে করবেন সেটা আরেকদিন বলবো। তবে সেই কৌশলটাও হবে ঘুমের মতো আনন্দদায়ক

পর্ব ২: শুরুটা করবেন কিভাবে?

আমাদের মত অলসদের প্রধান সমস্যা কোন কাজ শুরু করা। আমরা অনেক অনেক পরিকল্পনা করি। তারপর ভাবি ঘুম থেকে উঠেই কাজ শুরু করবো। তারপর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টায়ার্ড হয়ে আবার ঘুমিয়ে রেস্ট নেই। তাই আজকের প্রধান আলোচনা কিভাবে পড়া শুরু করবেন। প্রথমেই বলে নেই আমি আপনাকে পড়ার টেকনিক শেখাবো না। সেটা সম্ভবও না। সবারই নিজস্ব টেকনিক আছে। আমি শুধু আপনাকে কয়েকটা কাজের কথা বলবো যেগুলো করলে আপনি বিভিন্ন ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবেন।
১. আপনি নিশ্চয়ই বিভিন্ন সাজেশন, বড় ভাইয়ের হ্যান্ড নোট, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের লেকচার শিট, পেপারকাটিং এসব জোগার করে ফেলেছেন? এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ন। সবগুলোকে একটা বস্তায় ভরুন। তারপর ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে সেই টাকায় আইসিক্রম খান।
২. প্রফেসর, ওরাকল, এমপিথ্রি, এস্যুরেন্স ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকাশনীর বই একসেট করে এবং ডাইজেস্ট, এসএসসি ও এইচএসসি’র বোর্ডের বই, হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলী এসব কেনা হইছে? হয় নাই? কন কি? তাড়াতাড়ি যান। তারপর দোকানে যেয়ে সবগুলা নাম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেন। মনে রাখবেন আপনি অলস কিন্তু আঁতেল না। তারপর বেছে বেছে প্রতি সবাজেক্টের যেই বইটা আপনার কাছে সহজ লাগে সেটা কিনেন। কঠিন বই পড়ার কোন অতিরিক্ত সুবিধা নাই। আর যদি ইতিমধ্যে সবধরনের বইয়ের পাহাড় জমানো হয়ে যায় তাহলে দরকারী গুলো বাছাই করেন। আর বাকিগুলা আগের মতো বস্তায় ভরে বিক্রি করে সেই টাকায় কটকটি খান। মোটামোটা দুই একটা বই আলাদা রাখেন। কেন পরে বলতেছি।
৩. এতক্ষনে নিশ্চই জ্ঞানীগুনীরা আপনারে পরামর্শ দেওয়া শুরু করছে যে বিসিএস এ চান্স পেতে হলে ১২-১৩ ঘন্টা পড়াশোনা করতে হয়। কেউ কেউ নাকি ১৫ ঘন্টাও পড়ে। এইরকম পরামর্শ দিতে আসলে আগে সরাইয়া রাখা মোটা বইগুলা থেকে একটা তুলে তার মাথায় বাড়ি মারেন। কারন সে চাপাবাজ। হয় সে কখনোই বিসিএসে পাস করে নাই আর না হয় আপনাকে নার্ভাস করাই তার উদ্দেশ্যে।
৪. এখন কয়ঘন্টা পড়বেন? শুরুর ৫দিন কোন পড়াশোনার দরকার নাই। ঘুম, বিনোদন, খাওয়া দাওয়ার পর যে সময় পাবেন তা থেকে একঘন্টা সময় বের করে বইগুলো একটু ঘাটাঘাটি করুন। প্রতিটা পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখুন। কোন কিছু মুখস্ত করবেন না। শুধু টপিকগুলোর উপর চোখ বুলান। ২৪ ঘন্টায় মাত্র একঘন্টা সময় দিচ্ছেন, তাই সাবধান এই একঘন্টায়, নো মোবাইল, নো ফেসবুক, নো টিভি, নো আইপিএল, নো সানিলিওন, নো ফুশুর ফুশুর উইথ গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড। এই একঘন্টা শুধু অখন্ড মনযোগ।
৫. প্রথম পাঁচ দিনের পর দ্বিতীয় পাঁচ দিন দুইঘন্টা করে পড়বেন। এর মাঝে প্রতি আধাঘন্টায় ৫ মিনিট বিরতি দিবেন। তবে উঠবেন না। তার পরের পাঁচদিন তিন ঘন্টা। এভাবে ২৫ দিন পর আপনি দৈনিক ৬ ঘন্টা পড়াশোনার একটা রুটিনে পৌছবেন। তারপর আর বাড়নোর দরকার নাই। পরীক্ষার একমাস আগে পর্যন্ত আপনি এই ৬ ঘন্টার রুটিন চালিয়ে যাবেন। তবে এই ছয় ঘন্টা একটানা করার দরকার নাই। দুইঘন্টা পর পর ব্রেক নিবেন। অথবা সকালে তিনঘন্টা ও রাতে তিনঘন্টা এভাবেও পড়তে পারেন সেটা আপনার ইচ্ছা। কিন্তু যেভাবেই হোক দিনে ছয় ঘন্টা পড়তে হবে। ৬ ঘন্টার কোটা পুরন হওয়ার পর আপনি স্বাধীন। তারপর ফেসবুক, ক্রিকেট, সানিলিওন, দীপিকা, শাকিব, অপু সব চালাতে পারবেন।

পর্ব ৩: দ্য ম্যাজিক বুক
প্রথমে একটা গল্প দিয়ে শুরু করি। গ্রামের এক সহজসরল লোক তার দজ্জ্বাল বউয়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে ঠিক করলো, আর না, এবার সে পরিবার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে যাবে। সেই পরিকল্পনা মতো এক রাতে নদীর ঘাটে যেয়ে নৌকায় চড়ে বসলো। সারারাত স্রোতের বিপরীতে নৌকা চালালো। সকাল বেলা দেখে নতুন এলাকাটা যেনো কেমন চেনা চেনা লাগে। গ্রামের এক মহিলা নদী থেকে পানি নিয়ে আসলো। তো সেই লোক সেই গ্রাম্য বধুকে জিজ্ঞেস করে “এটা কোন ঘাটগো মা”। মহিলা তার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো “ওরে মিনসে, তুই এখানে, আর সারারাত আমি খুজে মরছি। এখন আবার বউকে মা ডাকা হচ্ছে। গাজা, ভাং খেয়েছিস নাকি সারারাত?”। ততক্ষনে সেই লোক খেয়াল করলো, সে সারারাত নৌকা বেয়েছে ঠিকই, কিন্তু খুটির সাথে যে দড়ি দিয়ে নৌকা বাধা ছিলো সেটা খুলতেই তার মনে নেই।
যাকগে সেই বোকা লোকের কথা। আপনারা এখন বলুন আপনাদের কি কখনো এমন হয় নি, যে সারাদিন বই নিয়ে বসে আছেন। খাওয়া নাই, নাওয়া নাই কিন্তু দিন শেষে দেখা গেলো তেমন কিছুই পড়া হয় নাই। ঘুরেফিরে কয়টা পাতাতেই আটকে আছেন? আসলে এমন হয় কারন আপনি বই নিয়ে বসে ছিলেন ঠিকই, কিন্তু মনোযোগ ছিলো অন্যদিকে। যাদের এমন হয় তাদের জন্যই এই টিপস ‘দ্য ম্যাজিক বুক’। ম্যাজিক বুক কোন বই না। এটা একটা খাতা। সেটা বানাবেন আপনি নিজেই এবং নিজের জন্যই। কেমন হবে সেই ম্যাজিক বুক কৌশল দেখে নিন।
১. প্রথমেই একটা খাতা বানাবেন। সেটা ভালো মানের হার্ডকাভারের নোট বুক হলেই ভালো হয়। সস্তা জিনিস হলে গুরুত্ব এমনিতেই কমে যাবে। নোট বুকের প্রথম পাতায় সুন্দর করে যে পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছেন সে পরীক্ষার নাম লিখেন।
২. তার পরের পৃষ্ঠায় যতগুলো সাবজেক্ট আছে, সবগুলোর নাম লিখেন। প্রতিটা সাবজেক্টের পাশে সে সাবজেক্টের যেসব বই কিনেছেন তার নাম লিখেন।
৩. তারপর যেকোন একটা পছন্দের সাবজেক্ট বাছাই করেন। পরের পৃষ্ঠায় সেই সাবজেক্টের নাম লিখে তার নিচে সেই সাবজেক্ট রিলেটেড গুরুত্বপূর্ন চ্যাপ্টার গুলোর নাম লিখেন।
৪. এবার আপনার আসল কাজ শুরু। প্রথমেই যেকোন একটা চ্যাপ্টার বাছাই করেন। বাছাই করে সে চ্যাপ্টারের কি কি টপিক আছে সেটার একটা লিস্ট তৈরী করেন। লিস্টটা গুরুত্বপূর্ন। টপিক বড় হলে সেটাকে কয়েক ভাগে ভাগ করে নেন। যেমন: জাতিসংঘ টপিকটা বড়। আপনি ভাগ করবেন এভাবে, জাতিসংঘ-১, জাতিসংঘ-২, জাতিসংঘ-৩। এমন ভাবে ভাগ করবেন যাতে একটা ভাগ/টপিক পড়তে বড়জোর ২০-২৫ মিনিট সময় লাগে।
৫. এখন ঠিক করেন আপনি প্রতিদিন অন্তত ৫টা টপিক পড়বেন। শুরুতে ১০ মিনিট টপিকটা রিভিশন দিবেন। তার পরের ১০ মিনিটে ভালো করে বুঝার চেষ্টা করেন। পরের ৫-১০ মিনিট আপনি সেই অংশটা ভালো করে রিভিশন দেন। এই পুরো ৩০ মিনিট হচ্ছে আপনার একটা লুপ। এই তিরিশ মিনিট অখন্ড মনযোগ দিতে হবে। এই সময় অবশ্যই আপনি ক্যান্ডিক্রাশ, সিওসি, ফেসবুক, আইপিএল, সানি লিওন, গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড ইত্যাদি থেকে দূরে থাকবেন। ৩০ মিনিট শেষ হওয়ার পর অবশ্যই এই টপিকটা পড়া বন্ধ করবেন ও পরবর্তী টপিকে যাবেন।

৬. প্রতিটা টপিক পড়া শেষ হওয়ার পর লিস্টে সেটার পাশে বড় করে গোল কিরে চিহ্ন দিবেন। যখনই আপনার মনে হবে ধুর কিছুই তো পড়া হলো না তখনই সেই লিস্টের দিকে তাকাবেন। সেই লিস্টের বড় বড় গোল করে দাগানো চিহ্নগুলোই আপনাকে মনে করিয়ে দিবে আপনার কিছু না কিছু পড়া হচ্ছে। প্রতিদিন ৫ টা করে টপিক পড়লেও তিরিশ দিনে আপনার ৫ গুন ৩০ = ১৫০ টা টপিক পড়া হবে। ১৫০ টা বিষয়ে জ্ঞান নেহাত ফেলনা নয়।
৭. শুরুতে যদি আপনি দৈনিক ৫ টা করে টপিক পড়ার অভ্যাস করতে পারেন দেখবেন আস্তে আস্তে সেই সংখ্যাটা বেড়ে ১০ এ চলে যাবে। যখন আপনি দৈনিক ১০ টা করে টপিক পড়তে পারবেন তখন আপনি প্রতি মাসে ১০ গুন ৩০ = ৩০০ টা টপিক পড়বেন। চিন্তা করা যায় !!!
৮. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কথা প্রতিদিন একবার এই খাতাটাতে চোখ বুলাবেন। দেখবেন বিভিন্ন টপিকের পাশে গোলগোল চিহ্ন দেওয়ার একটা নেশা পেয়ে বসবে। এটা একধরনের সেলফ মোটিভেশনের কাজ করবে। (চলবে)


ডা: কামরুল হাসান রাহাত
বিডিএস (ঢাকা ডেন্টাল কলেজ)
৩৫ তম বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমন আরো পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন
Join

No comments:

Post a Comment

close